
মমতাজ মহল কে ছিলেন । মমতাজ মহলের পরিচয় দাও
উত্তর : ভূমিকা : সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজমহলের নাম ইতিহাসে খ্যাত। মমতাজমহল ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের প্রিয়তমা পত্নী। সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের ন্যায় মমতাজমহলও ছিলেন আকর্ষণীয় সৌন্দর্যের অধিকারিণী।
এ সম্রাজ্ঞীর সমাধি সৌধের উপরই সম্রাট শাহজাহান নির্মাণ করেছেন এক কালজয়ী প্রেমের অক্ষয় সৃষ্টি তাজমহল ।
→ মমতাজমহলের পরিচয় : মমতাজমহল ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীরের পত্নী সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের ভ্রাতা আসফ খানের কন্যা। মমতাজমহলের প্রকৃত নাম ছিল আরজুমান্দ বানু বেগম।
মমতাজ মহলের জন্ম ১৫৯৪ সালে। তিনি ছিলেন অসামান্য সৌন্দর্যের অধিকারিণী। তার পিতা ছিলেন মুঘল দরবারের প্রভাবশালী আমির এবং ফুফু নূরজাহান ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীরের পত্নী।
→ সম্রাট শাহজাহানের সাথে বিবাহ : জাহাঙ্গীরের পুত্র খুররম বা শাহজাহানের সাথে মমতাজ মহলের বিবাহ হয় ১৬১২ সালে । তখন মমতাজ মহলের বয়স ছিল ১৮ বছর।
ঐতিহাসিকদের মতে, এ যাবৎ যেসব বিবাহ মুঘল দরবারে অনুষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে একমাত্র সম্রাট শাহজাহানের সাথে আরজুমান্দ বানু বেগমের বিবাহ জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুসম্পন্ন হয়।
→ সম্রাট শাহজাহানের উপর মমতাজমহলের প্রভাব : সম্রাট শাহজাহান তার পত্নীদের মধ্যে মমতাজকে প্রাণাধিক ভালোবাসতেন। মমতাজ তার ফুফুর ন্যায় আকর্ষণীয় সৌন্দর্য ও গুণের দ্বারা স্বামীর মন জয় করেন।
সম্রাট তার ভালোবাসায় প্রীত হয়ে তাকে মালিকা-ই-জাহান খেতাবে ভূষিত করে মহীষীর আসন দান করেন। মমতাজমহল ছিলেন বিদূষী, উদার, ন্যায়পরায়ণ এবং মার্জিত রুচির অধিকারিণী।
সম্রাট শাসনকার্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার পরামর্শ গ্রহণ করতেন। অনেক দরিদ্র অনাথ বালিকার তিনি আশ্রয়স্থল ছিলেন।
সম্রাট তার কর্মগুণ ও বিশ্বস্ততায় প্রীত হয়ে তাকে রাজকীয় সিলমোহর সংরক্ষণের দায়িত্ব অর্পণ করেন। কিন্তু এ গুরুদায়িত্ব পালনে তিনি রাজি না হওয়ায় সম্রাজ্ঞীরা ইচ্ছায় তার পিতা আসফ খানের উপর এটি অর্পণ করেন।
→ মমতাজমহলের মৃত্যু : মমতাজমহল ১৬৩১ সালে তার চতুর্দশ সন্তানের জন্মদানকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে সম্রাট শাহজাহান দাক্ষিণাত্যে খান জাহান লোদীর বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত ছিলেন।
সম্রাট তার প্রিয়তমা পত্নীর অকাল মৃত্যুতে গভীর দুঃখ পান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি প্রায় এক মাস দরবারে বসেননি । তিনি প্রায়ই বলতেন- “সাম্রাজ্যের আর কোনো মাধুর্য নেই, আমার আর কোনো মোহ নেই।”
ফলে শাহজাহান মমতাজমহলের প্রেমকে চিরঞ্জীব করার জন্য তার সমাধির উপর | নির্মাণ করেন তাজমহল । যা দাঁড়িয়ে আছে আগ্রার যমুনা নদীর তীরে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইরানি কন্যা মমতাজমহল তার অসামান্য রূপ, বহুমুখী গুণ এবং ভালোবাসা দ্বারা সম্রাট শাহজাহানের মন জয় করেন।
তাই শাহজাহান তাকে মালিকা-ই-জাহান খেতাবে ভূষিত করেন। তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত তাজমহল বিশ্বের প্রেমিকদের জন্য একটি জীবন্ত নিদর্শন ।