- (অজানা তথ্য) পাহাড়পুর সম্পর্কে ১০টি বাক্য তথ্য রচনা জেনে নিই
- ১/ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার
- ২/ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের আয়তন
- ৩/ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কক্ষ
- ৪/ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মন্দির
- ৫/ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের আঙ্গিনা
- ৬/ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের শৌচাগার ও স্নানাগার
- ৭/ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের স্নানঘাট
- ৮/ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের গন্ধেশ্বরী মন্দির
- ৯/ ঢাকা ও নওগাঁ থেকে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের দূরত্ব
- ১০/ পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের জাদুঘরে যেসকল মূর্তি সংরক্ষিত রয়েছে সেই মূর্তিগুলোর নাম হল
- Rk Raihan

পাহাড়পুর সম্পর্কে ১০টি বাক্য – পাহাড়পুর জায়গাটি বাংলাদেশের অতি প্রাচীন ও পুরনো একটি স্থান। “পাহাড়পুর” এই জায়গাটি পাহাড়পুর-বৌদ্ধ বিহার/সোমপুর বিহার/ সোমপুর মহাবিহার নামেও পরিচিত। এই জায়গাটির ইংরেজি নাম হচ্ছে (Paharpur Buddhist Bihar)। পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা ছিলেন শ্রী ধর্মপাল দেব।
অষ্টম শতক যখন শেষের দিকে ঘনিয়ে আসে বা নবম শতক শুরুর দিকে তখন তিনি এই পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারটি তৈরি করেছিলেন।
১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এ বিশাল কির্তী আবিষ্কার করার পরিকল্পনা করেছিলেন। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে এই স্থানটি তার হিসেবে বিবেচিত হয়।
আপনারা যারা পাহাড়পুর সম্পর্কে ১০টি তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদের এই পোস্টটি ফলো করতে পারেন। যার ফলে আপনি পাহাড়পুর-বৌদ্ধ বিহার সম্পর্কে অনেক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে পাহাড়পুর সম্পর্কে চারটি বাক্য নিয়ে আলোচনা করা যাক।
(অজানা তথ্য) পাহাড়পুর সম্পর্কে ১০টি বাক্য তথ্য রচনা জেনে নিই
১/ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার
পাহাড়পুরকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার বলা হয়। এটি আয়তনে এতটাই বড় যে পৃথিবীর কোন বৌদ্ধ বিহারের সাথে এটির তুলনা করা যায় না। শুধুমাত্র ভারতের নালন্দা বিহারের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। প্রায় ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে বৌদ্ধরা ধর্মচর্চা করতে আসতো।
এমনকি শুধু উপমহাদেশের বৌদ্ধরা নয় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, তিব্বত, চীন এ সকল স্থানের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও ধর্ম চর্চা করতে আসতো। বৌদ্ধদের ধর্মচর্চার জন্য পৃথিবীর মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত স্থান।
২/ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের আয়তন
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ডিজাইনটি দেখতে চারদিক মিলিয়ে চতুর্ভুজ আকারের মত। এটি উত্তর ও দক্ষিণ দিক মিলিয়ে ২৭৩.৭ মিটার বিস্তৃত এবং পূর্ব ও পশ্চিম মিলিয়ে ২৭৪.১৫ মিটার বিস্তৃত। চারদিক দিয়ে বিশাল দেয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল।
৩/ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কক্ষ
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের উত্তর দিকে ৪৫ টি কক্ষ ছিল এবং বাকি তিনদিকে মিলিয়ে ৪৪ টি কক্ষ ছিল। এই কক্ষগুলোতে তিনটি মেঝে আবিস্কার করা হয়েছিল।
মেঝের উপর ইট বিছিয়ে সুরকি দিয়ে মজবুত করা হয়েছিল। ধারণা করা হয় ৯২টি কক্ষে মেঝের উপর বেদি নির্মাণ করা হলেও প্রথম প্রথম এই কক্ষগুলো ভিক্ষুকদের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরে দিয়ে কিছু কক্ষ প্রার্থনাগার কাজে জন্য আলাদা রাখা হয়।
৪/ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মন্দির
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের উন্মুক্ত চত্বরে মাঝখানের দিকে একটি মন্দির অবস্থিত ছিল। এই মন্দিরটি আজ থেকে অনেক অনেক বছর পূর্বে ধ্বংসে পরিণত হয়েছে।
মন্দিরটি বর্তমানে ২১ মিটার উঁচু হলেও আগে এটির উচ্চতা ছিল ৩০ মিটার উঁচু। মন্দিরের পূর্ব-পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরাও করা এবং উত্তর দিকের মাধে সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এই শিড়ির জায়গাটি ধ্বংস করে নতুন একটি কাঠামো আবিষ্কার করা হয়েছিল।
৫/ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের আঙ্গিনা
পাহাড়পুরের আঙ্গিনায় কিছু ইমারতের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এমন কিছু ইমারত রয়েছে যেগুলো শাসনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এমন কিছু ইমারত রয়েছে যেগুলো প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
দক্ষিণ-পূর্বদিকে ভোজনশালা ও রন্ধনশালা আছে। ৪৬ মিটার বিশিষ্ট একটি নর্দমা আছে এবং তিনটি পানির কুপ রয়েছে।
৬/ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের শৌচাগার ও স্নানাগার
স্নানাগার ও শৌচাগার পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের বাহিরে অবস্থিত। এটি ২৭ মিটার দূরে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। সেখানে রয়েছে অনেকগুলো স্নানাগার ও শৌচাগার।
স্নানাগার ও শৌচাগার যেখানে অবস্থিত সেটি পূর্ব-পশ্চিমে ৩২মিটার দীর্ঘ ও উত্তর-দক্ষিণে ৮.২৩মিটার প্রশস্ত। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে বহির্বিভাগে অবাধে চলাচলের জন্য এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি খিলান অবস্থিত রয়েছে যা ১.৯২মিটার চওড়া এবং ২.৫মিটার উঁচু।
৭/ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের স্নানঘাট
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের দক্ষিণ-পূর্ব কোণার দিক থেকে প্রায় ৪৯ মিটার দক্ষিনে ৩.৫ মিটার প্রশস্ত একটি স্নানঘাট রয়েছে। স্নানঘাটের দুই দিকে বিশাল দেয়াল দিয়ে বিস্তৃত।
প্রতিটি দেয়াল ১.৫ মিটার করে প্রশস্ত আছে। এই স্নানঘাট ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল এবং এটি ভূপৃষ্ঠের নিচ দিয়ে বারোমিটার গভীরে গিয়ে পৌঁছেছে। যেহেতু এই স্নানঘাটের গভীরতা বেশি ছিল তাই ধারণা করা হয় হয়তো এই স্নান ঘাটের সাথে নদীর সম্পৃক্ততা ছিল।
৮/ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের গন্ধেশ্বরী মন্দির
স্নান ঘাট থেকে ১২ মিটার পশ্চিমে অবস্থিত একটি ইমারত পাওয়া গেছে। সেই ইমারতটি গন্ধেশ্বরী মন্দির বলে বিবেচিত করা হয়। এই গন্ধেশ্বরী মন্দিরের দৈর্ঘ্য ৬.৭ মিটার এবং প্রস্থ ৩.৫ মিটার। মন্দিরের ভিতরে বিভিন্ন রকমের কারুকার্য ও নকশা দিয়ে সু সুসজ্জিত করা হয়েছে।
এমনকি মূর্তি দিয়ে পুজো করার জন্য হলঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেহেতু হলঘরটি বিশাল বড় তাই ১.৪ মিটার বিশিষ্ট আলাদা পূজার করার জন্য রুম রয়েছে।
৯/ ঢাকা ও নওগাঁ থেকে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের দূরত্ব
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার মূলত বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার অন্তর্গত। যদি আপনি পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে যেতে চান তাহলে ঢাকা থেকে রাজশাহী সড়কপথের মাধ্যমে নওগাঁ পৌঁছাতে হবে।
ঢাকা থেকে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের দূরত্ব সাধারণত ২৮২ কিলোমিটার হয়ে থাকে এবং নওগাঁ থেকে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার।
১০/ পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের জাদুঘরে যেসকল মূর্তি সংরক্ষিত রয়েছে সেই মূর্তিগুলোর নাম হল
- নন্দী মূর্তি
- কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণু মূর্তি
- সূর্য মূর্তি
- কৃষ্ণ পাথরের শিবলিঙ্গ
- বেলে পাথরের মনসা মূর্তি
- হরগৌরীর ক্ষতিগ্রস্ত মূর্তি
- কৃষ্ণ পাথরের লক্ষ্মী নারায়ণের ভগ্ন মূর্তি
- কৃষ্ণ পাথরের উমা মূর্তি
- বেলে পাথরের গৌরী মূর্তি
- বেলে পাথরের বিষ্ণু মূর্তি
- বেলে পাথরের চামুণ্ডা মূর্তি
- লাল পাথরের দণ্ডায়মান শীতলা মূর্তি
- কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণুর খণ্ডাংশ
- কৃষ্ণ পাথরের দণ্ডায়মান গণেশ
- বেলে পাথরের কীর্তি মূর্তি
- দুবলহাটির মহারাণীর তৈলচিত্র
আশা করি, আমাদের এই আর্টিকেলটি ভিজিট করার মাধ্যমে আপনি পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার সম্পর্কে দশটি বাক্য জানতে পারবেন। এছাড়াও আপনি ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট এক্সপ্লোর করে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার সম্পর্কে আরো গভীর তথ্য নিয়েও জ্ঞান লাভ করতে পারেন।