
নবাব সিরাজ উদ্ দৌলার চরিত্র কেমন ছিল
- অথবা, নবাব সিরাজের চরিত্র আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব হলেন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা। তিনি ১৭৫৬ সালে তাঁর নানা আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার সিংহাসনে আরোহণ করেন।
তিনি সিংহাসনে আরোহণের পর থেকেই প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে পড়েন। আস্তে আস্তে চারদিকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয় এবং ১৭৫৭ সালে ইংরেজের কাছে পলাশির প্রান্তরে পরাজিত ও নিহত হন।
নিম্নে নবাব সিরাজের চরিত্র তুলে ধরা হলো :
নবাব সিরাজের চরিত্র :
১. বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব : নবাবের চরিত্র সম্পর্কে ইংরেজ ঐতিহাসিকরা পক্ষপাতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। তারা বলেছেন নবাব সিরাজ ছিলেন নিষ্ঠুর, অত্যাচারী এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ।
২. রাজনৈতিক দূরদর্শিতা : নবাব সিরাজ যখন সিংহাসনে আরোহণ করেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর। এ বয়সে আবেগপ্রবণ কিংবা বুদ্ধিভ্রম হওয়া তার পক্ষে কোনো অমার্জনীয় অপরাধ ছিল না।
তাই এ নিরিখে বিচার করলে ঠিক হবে না। তা সত্ত্বেও তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেই যথেষ্ট রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছিলেন।
ঘষেটি বেগমকে অন্তরীণ করা, কলকাতা দখল, পূর্ণিয়া অধিকার ইত্যাদি তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে।
৩. উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব : উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের অভাবে নবাবকে নানা সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাঁর উচিত ছিল মীর জাফরকে বন্দি করে রাখা।
তাহলেই অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীরা বিরুদ্ধাচরণ করতে সাহস পেত না। অধিকন্তু, বিজয়ের মুহূর্তে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের পরামর্শ অনুযায়ী যুদ্ধ বন্ধের আদেশ দিয়ে তিনি নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
৪. দেশাত্মবোধ : নির্ভীকতা ও দেশাত্মবোধ সিরাজের চরিত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করাই ছিল তার প্রধান লক্ষ্য এবং এজন্য তিনি ইংরেজদের সাথে আমরণ সংগ্রাম করেন।
দেশের স্বাধীনতা বিদেশিদের হাতে চলে যেতে দেখে তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থ ত্যাগ করে চরম শত্রু মীর জাফরের সম্মুখে স্বীয় উষ্ণীয় নিক্ষেপ করেন এবং তাকে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য কাতর অনুরোধ জানান ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শাসন কার্য ও রাজনীতিতে তাঁর যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার অভাব থাকলেও মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন সাহসী, অকপট ও দেশপ্রেমিক, তাঁর সম্বন্ধে ঐতিহাসিক ম্যালসন বলেন, তার যতো দোষই থাক না কেন; তিনি তার প্রভু ও দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেননি।
বেদনাময় নাটকের প্রধান অভিনেতাদের মধ্যে একমাত্র তিনিই ছিলেন ব্যতিক্রম । যিনি প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করেননি।