দস্তক কি । দস্তক বলতে কি বুঝায়

1 Nov, 2023
দস্তক কি । দস্তক বলতে কি বুঝায়

দস্তক কি । দস্তক বলতে কি বুঝায়

  • অথবা, দস্তক সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।

উত্তর : ভূমিকা : ১৬০০ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬০১ সালে স্যার জেমস লেনকেসটা-এর নেতৃত্বে। কোম্পানি ভারতবর্ষে তাদের প্রথম বাণিজ্য প্রতিনিধি দল নিয়ে আগমন করেন।

প্রথম পর্যায়ে কোম্পানি অন্যান্য ইউরোপীয় বণিকদলের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হলেও ধীরে ধীরে তারা ভারতবর্ষের বাণিজ্যে সাফল্য লাভ করতে থাকে।

তাদের এই ফাঁকি রোধকল্পে সম্রাট তাদের এককালীন অর্থের বিনিময়ে এক নতুন শুল্কমুক্তির ব্যবস্থা করে দেন, যা ইতিহাসে দস্তক নামে বিখ্যাত হয়ে আছে ।

→ দস্তক : দস্তক ছিল মূলত মুঘল সম্রাট কর্তৃক ইংরেজদের জন্য প্রদত্ত একটি নতুন বাণিজ্যিক ছাড়পত্র। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবকে এককালীন অর্থ প্রদানের মাধ্যমে সারা বছর তার রাজ্যে অবাধে ও বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করে, আর এই অধিকার প্রদানের প্রমাণ হিসেবে সম্রাট ও নবাব কোম্পানিকে একটি ছাড়পত্র সরবরাহ করত, যা প্রদানের মাধ্যমে কোম্পানি সদস্যরা সারা দেশে বিনাতন্তে অবাধ বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করেন।

এই দস্তক লাভ করার ফলে কোম্পানির আয় বহুগুণ বৃদ্ধি পায় এবং কোম্পানি ধীরে ধীরে এই দন্তকের অপব্যবহার শুরু করেন।

কোম্পানির এই দত্তক লাভের ফলে অন্যান্য ইউরোপীয় বণিক ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হন, কারণ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি সপ্তকের ব্যবহার করে শুল্কমুক্তভাবে সারাদেশে অবাধে বাণিজ্য করতে পারলেও অন্যান্য ব্যবসায়ীরা সে সুযোগ পায়নি।

ফলে তাদের প্রচুর তত্ত্বের বিনিময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হতো বলে তারা বাণিজ্যিক দিক থেকে ক্ষতির সম্মুখীন হন।

তাই তারা দীর্ঘদিন ধরে সম্রাটের কাছে এই দম্ভক প্রথা তুলে দেয়ার জন্য নানাভাবে আবেদন নিবেদন করে আসছিল, কিন্তু দরবারে কোম্পানির পক্ষে কিছু রাজ অমাত্য কাজ করতো তাই এই দস্তক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা সম্ভব হচ্ছিল না।

দস্তকর অপব্যবহার : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এককালীন অর্থ প্রদানের মাধ্যমে সম্রাট ও নবাবের কাছ থেকে দত্তক সুবিধা লাভ করেন এবং এর ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে দারুন সাফল্য লাভ করেন, কিন্তু এ সময় কোম্পানির লাভের পরিমাণ যথেষ্ট হলে কোম্পানির কর্মচারীদের বেতন ছিল খুবই সামান্য, ফলে তারা ধীরে ধীরে দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে পড়ে এবং তারা সরকারি দস্তকের অপব্যবহার করে নিজেরাই ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে, কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা শুধুমাত্র দস্তক নামক ছাড়পত্রে মাল আমদানি বা রপ্তানি একথা লিখেই দিলেই বিনা শুল্কে কোম্পানির পণ্যদ্রব্য এক স্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়া যেত।

See also  ১২টি স্বাধীনতা এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর PDF ফাইল

এদিকে এসকল সরকারি দপ্তকে স্বাক্ষরের ভার নবাব ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন, ফলে তারা যথেষ্টভাবে এই দস্তকের উপব্যবহার শুরু করেন এবং সমগ্র অঞ্চলে এই দত্তক দেখিয়ে বিনাশুল্কে ব্যবসা- বাণিজ্য শুরু করেন।

কিন্তু দস্তক দেখিয়ে কোম্পানি ও তার কর্মচারীরা বিনাশুল্কে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারলেও ডাচ- পর্তুগিজ, আর্মেনীয় ও অন্যান্য দেশীয় বণিক সংঘগুলো এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা কোম্পানির সাথে বাণিজ্যিক দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছিল।

কারণ যেখানে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও তার কর্মচারীরা দন্তকের অপব্যবহার করে বাণিজ্যিক সুবিধা পাচ্ছে সেখানে অন্যান্য বণিকদলকে দ্বিগুণ শুদ্ধ প্রদান করে বাণিজ্য পরিচালনা করতে হচ্ছে।

ফলে তারা মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং অনেক দেশীয় কোম্পানি এই প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পরে দেউলিয়া হয়ে পড়ে।

আর কোম্পানি ও যথেচ্ছা দস্তক ব্যবহারের ফলে নবাব ও বার্ষিক প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষে বাণিজ্য করতে এসে এদেশের কিছু অসৎ রাজকর্মচারীর সাহায্যে সম্রাট ও নবাবদের প্ররোচিত করে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করে এবং যার ব্যবহার করে তারা প্রভূত বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি লাভ করে। নবাব প্রদত্ত এমন একটি সুযোগ ছিল কোম্পানির সপ্তক লাভ।

Rk Raihan

আমি আরকে রায়হান। আমাদের টার্গেট হল ইন্টারনেটকে শেখার জায়গা বানানো। আরকে রায়হান বিশ্বাস করেন যে জ্ঞান শুধুমাত্র শেয়ার করার জন্য তাই কেউ যদি প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছু জানে এবং শেয়ার করতে চায় তাহলে আরকে রায়হান পরিবার তাকে সর্বদা স্বাগত জানানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Category