
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কি । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর ইতিহাস
- অথবা, ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উপর একটি সংক্ষিপ্ত টাকা লিখ।
- অথবা, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্পর্কে ধারণা পাও।
- অথবা, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচয় দাও ।
উত্তর : ভূমিকা : ভারতবর্ষের ইতিহাসের সাথে যে নামটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত তা হলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। যার শাসনকাল দীর্ঘ দুইশত বৎসর পর্যন্ত ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।
ভারতে ঔপনিবেশিক শক্তিসমূহের মাঝে সর্বশেষে আগমনকারী গোষ্ঠী হলো ইংরেজ। তবে শেষ পর্যন্ত তারাই চূড়ান্ত সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়।
এভাবেই বাংলায় বিশেষ করে ভারতের জমিনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাম উল্লেখযোগ্য। ফলে বণিকের মানদণ্ড পরিণত হয় রাজপতে।
→ কুঠি নির্মাণ : ইংরেজরা এদেশে নবাবের অনুমতিক্রমে বিভিন্ন স্থানে কুঠি স্থাপনে মনোযোগী হয়। ঐতিহাসিক এ ঘটনাটি ইতিহাসের পাতায় চির অম্লান হয়ে আছে।
রানি এলিজাবেথের অনুমতিসহ বাংলার নবাবের অনুমতি লাভের পর ইংরেজরা পুরোদমে বাণিজ্যে মনোযোগী হয়।
কিন্তু এ কোম্পানির কাউন্টার পার্ট হিসেবে ইংরেজ সরকার আরও একটি কোম্পানিকে ১৬০৬ সালে প্রাচ্যে বাণিজ্যের অনুমতি প্রদান করলে বিবাদ বাধে।
পরবর্তীতে ক্রোমওয়েল বিপ্লবের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হয়। সম্রাট শাহ সুজা তৎকালীন সময়ে তথা ১৬৫২ সালে ইংরেজদের কুঠি নির্মাণের অনুমতি প্রদান করে।
যার ফলে ইংরেজরা বাংলায় ও হুগলীতে কুঠি নির্মাণের সুযোগ লাভ করে। আর তারা এ সুযোগ শতভাগ কাজে লাগানোর ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত রাখে কিন্তু পরিস্থিতি সবসময় এক রকম থাকে না।
ফলে এক সময় তারা অবাধে কুঠি নির্মাণের যোগ্যতা হারায়। এতে ইংরেজ বণিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং তাদের দাবি পূরণের জন্য তারা বলপ্রয়োগ করে আর এ ব্যাপারে তারা নানামুখী কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে।
তবে প্রাচ্যে বাণিজ্য এবং কোম্পানির মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন ইত্যাদি ধারণার ব্যাপারে। ইংল্যান্ডের সরকার অতটা মনোযোগী ছিলেন না।
→ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মূলত মার্কেন্টাইল ইংল্যান্ডের আশা ভরসার প্রতীক। তবে ১৬৯৮ সালে তৃতীয় উইলিয়াম তিনটি কোম্পানিকে ভারতবর্ষে ব্যবসার অনুমতি প্রদান করে।
ব্যবসা-বাণিজ্যে ইংল্যান্ড প্রবৃদ্ধি লাভ করে মূলত ১৬৮৮-১৭৬৫ সালে।সর্বোপরি ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে ষোল শতকে অর্থাৎ ১৬০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর রানি এলিজাবেথের অনুমতিক্রমে ভারতীয় অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে এবং উক্ত সনদ অনুযায়ী তারা ২১ বছর পর্যন্ত একচেটিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য করার অনুমতি লাভ করে।
পরবর্তীতে এদেশে ইংরেজদের প্রাধান্য ক্ষমতা এতোটাই বৃদ্ধি পায় যে, তারা এদেশে শাসন ক্ষমতা লাভে আগ্রহী হয়ে উঠে এবং ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে পলাশির আম্রকাননে পরাজিত করার মাধ্যমে তারা এদেশের শাসনভার নিজেদের দখলে নেওয়ার পথ সুগম করতে সক্ষম হয় এবং ১৮৫৮ সালে বিলুপ্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সমগ্র ভারতবর্ষ শাসন করে তথা ভারতীয় উপমহাদেশ তাদের দখলে চলে আসে। এক পর্যায়ে ব্রিটিশ সরকার সরাসরি ভারত শাসন শুরু করে ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, ১৭১৭ সালে ফররুখশিয়ারের মাধ্যমে ফরমান প্রাপ্তি ও ১৭৫৭ সালে ‘নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতনসহ উপরিউক্ত বিভিন্ন বিষয় এদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য বিস্তার ও শাসনকার্য পরিচালনায় তথা সমগ্র ভারতবর্ষে তাদের একচেটিয়া ক্ষমতা দখলে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল ।