- বেগম রোকেয়া সম্পর্কে ১০টি বাক্য:
- ১/ বেগম রোকেয়া তার নিজের লিখা বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম
- কবিতার নাম: বেগম রোকেয়া
- বেগম রোকেয়া রচিত আরও বিখ্যাত কবিতাগুলো মধ্যে রয়েছে-
- ২/ রোকেয়া দিবস পালন করা
- ৩/ সুশিক্ষিতা নারী রোকেয়া
- ৪/ নারীদেরকে গৃহবন্দী জীবন থেকে বের করে আনা
- ৫/ নারীদেরকে শিক্ষার বিষয়ে সচেতন করা
- ৬/ সামাজিক কর্মকাণ্ডে যোগদান করা
- ৭/ “বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠা করা
- ৮/ রোকেয়া হল প্রতিষ্ঠা করা
- ৯/ উপন্যাসের স্প্যানিশ চলচ্চিত্র
- ১০/ কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা
- Rk Raihan

বেগম রোকেয়া সম্পর্কে ১০টি বাক্য – বেগম রোকেয়ার পুরো নাম হচ্ছে রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেন। সাধারণত তিনি সকলের কাছে বেগম রোকেয়া নামেই পরিচিত। তিনি ১৮৮০ সালের ৯ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩২ সালের ৯ই ডিসেম্বর শাহাদাত বরণ করেন।
তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত। তার মত অমায়িক একজন নারী সম্পর্কে প্রশংসা করলেও শেষ করা যাবে না। যদি আপনি বেগম রোকেয়া সম্পর্কে ১০টি বাক্য জানতে চান তাহলে আমাদের এই পোস্টটি আপনার জন্য খুবই উপকারী হতে পারে।
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে ১০টি বাক্য:
১/ বেগম রোকেয়া তার নিজের লিখা বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম
১৯০২ সাল থেকে বেগম রোকেয়া সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। তার লেখা বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। বেগম রোকেয়ার লিখা “পিপাসা” নামক রচনাটি কলকাতা হতে নবপ্রভা নামক পত্রিকায় ছাপানো হয়েছিল।
এছাড়াও বেগম রোকেয়া ১৯০৫ সালে “সুলতানাজ ড্রীম” অথবা “সুলতানার স্বপ্ন” নামক একটি ইংরেজি সাহিত্য রচনা করেছিলেন যা মাদ্রাজ থেকে পত্রিকায় ছাপানো হয়েছিল। বেগম রোকেয়ার লেখা একটি বিখ্যাত কবিতা হলো-
কবিতার নাম: বেগম রোকেয়া
“‘বেগম রোকেয়া
তুমি তো মহিষী
জাগিয়ে দিয়েছ তুমি
নারীদের সৃর্যের রশ্মি।
তুমি যে শিক্ষা
করে গেছো দান
তা চিরকাল নারীদের জন্য অম্লান।
হে মহিষী,
তোমার যে অবদান
তা পুরুষ শাসিত সমাজের জন্য অপমান
কারন তারা তো কেন- কাল দেয়নি
নারীদের ন্যায্য সম্মান।
হে মহিষী,
তুমি মহান
তোমার কন্ঠে উচ্চারিত হয়েছে
নারী-পুরুষের অধিকার সমান।
পুরুষরা মানিয়ে নিতে
বোধ করে অসম্মান।
হে মহান
তুমি তো দেখিয়ে দিয়েছ
সমাজের উন্নয়নের জন্য
কত নারীদের অবদান
তাদের ছাড়া সম্ভব না
কোন কিছুর উন্নয়ন।
তুমি বলেছ
নারীরা নয় শুধু
রান্না করার যোগ্য
তারা এখন বলতে
শিখেছে সমান অধিকার
তাদের ন্যায্য।
রোকেয়া
তুমি মহান নারী
তোমার মত কেউ যদি
আগে জন্ম গ্রহণ করত
তাহলে বাংলাদেশ পেতো
সোনার হাড়ি।
বেগম রোকেয়া রচিত আরও বিখ্যাত কবিতাগুলো মধ্যে রয়েছে-
- বাসিফুল
- নবনূর
- শশধর
- প্রভাতের শশী
- মহিলা
- পরিতৃপ্তি
- নলিনী কুমুদ
- স্বার্থপরতা
- কাঞ্চনজঙ্ঘা
- প্রবাসী রবিন ও তাহার জন্মভূমি
- সওগাত
- আপীল
- সাধনা
- নিরুপম বীর
- ধূমকেতু
২/ রোকেয়া দিবস পালন করা
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন তার কৃতকর্মের জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে এতটাই স্মরণীয় হয়ে আছেন যার কারণে প্রতিবছর ডিসেম্বরের নয় তারিখে বাংলাদেশ সরকার থেকে বেগম রোকেয়া নামক একটি দিন বা দিবস উদযাপন করা হয়।
৩/ সুশিক্ষিতা নারী রোকেয়া
বেগম রোকেয়ার পিতা আবু আলী হায়দার সাহেব বাংলা, উর্দু, আরবী, ফার্সি, ইংরেজি, হিন্দি, ভাষায় পারদর্শীতা অর্জন করলেও তিনি তার মেয়ের শিক্ষার ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন।
এমনকি বেগম রোকেয়া তার বড় দুই ভাই মোহাম্মদ ইব্রাহীম আবুল আসাদ সাবের ও খলিলুর রহমান আবু যায়গাম সাবের এবং এক বোন করিমুন্নেসার সহায়তায় তার শিক্ষা জীবনে উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। সুশিক্ষিত নারী হিসেবে গড়ে তুলতে বেগম রোকেয়ার বড় দুই ভাই ও বোনের অবদান অপরিসীম।
৪/ নারীদেরকে গৃহবন্দী জীবন থেকে বের করে আনা
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের আমলে বা সময়কালে নারীদের অবস্থা ছিল করুন। সেসময় নারীদের সমান অধিকার বা নিজেদের স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। নারীদের জীবন যাপনের ধরন ছিলো এমন যে তাদের গৃহের মধ্যেই বন্দী হয়ে থাকতে হতো যা স্বাভাবিক জীবনের মধ্যেই পরে না।
বেগম রোকেয়া সেই সময় গৃহবন্দী নারীদের ঘর থেকে বের করে এনে আন্দোলনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নিয়ম অনুযায়ী নারীদেরকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য উৎসাহিত করেছিলেন।
৫/ নারীদেরকে শিক্ষার বিষয়ে সচেতন করা
বেগম রোকেয়ার শাসনামলে যেহেতু নারীদের পরিবার থেকে গৃহবন্দী থাকার নির্দেশ ছিল তাই নারীরা কখনোই সুশিক্ষা লাভ করতে পারত না। এমনকি তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও যেতে পারত না।
বেগম রোকেয়া একসময় এটি নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলেন এমনকি তিনি মাত্র পাঁচ জন ছাত্রী নিয়ে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করলেন।
শত হাজার বাধা বিপত্তির সাথে লড়াই করে বেগম রোকেয়া নারীদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে সফল হয়েছিলেন। এমনকি তিনি সেই সময় নারীদের শিক্ষার বিষয়ে আন্দোলন না করলে হয়তো বর্তমানে আমরা নারীরা শিক্ষিত হতে পারতাম না।
৬/ সামাজিক কর্মকাণ্ডে যোগদান করা
বেগম রোকেয়া তার বিভিন্ন কাজ দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অথবা সমাজরক্ষামূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আঞ্জুমান খাওয়াতীন নামক একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। যা মুসলিম নারীদের জন্য একটি বিশেষ সংগঠন হিসেবে কাজ করবে।
৭/ “বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠা করা
বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে ৮ ই অক্টোবর ২০০৮ সালে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
যেহেতু বেগম রোকেয়া নারী জাগরণের অগ্রদূত কাই বাংলাদেশ সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নাম স্মরণীয় করে রাখার জন্য রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে সে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম দেয়া হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
সেই সময় কোনো নারীর নামে সারা বাংলাদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।বেগম রোকেয়াই একমাত্র নারী যার নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
৮/ রোকেয়া হল প্রতিষ্ঠা করা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬০ সালের দিকে “উইমেন্স হল” নামের একটি হল ছিল যেখানে ছাত্রীরা বসবাস করত। “উইমেন্স হল” নামটি পরিবর্তন করে “রোকেয়া হল” নামটি যুক্ত করা হয়। বেগম রোকেয়া তার কৃতকর্মের জন্য এতটাই সম্মানিত হয়েছেন যে তার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হল প্রতিষ্ঠাতা করা হয়েছিল।
শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে “রোকেয়া হল” প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। বাংলাদেশের অন্যান্য পাবলিক ইউনিভার্সিটি যেমন- খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও “রোকেয়া হল” হল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
৯/ উপন্যাসের স্প্যানিশ চলচ্চিত্র
বেগম রোকেয়া “সুলতানার স্বপ্ন” নামে যে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন সেই উপন্যাসটির ওপর ভিত্তি করে একজন স্প্যানিশ নির্মাতা ইসাবেল হারগুয়েরা স্প্যানিশ ভাষায় এনিমেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্প্যানিশ ভাষায় এটির নাম রাখা হয়েছে “এল সুয়েনো দে লা সুলতানা”।
তাহলে বুঝতেই পারছেন তিনি এতটা বিখ্যাত ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন যে বাংলাদেশের বাহিরে স্প্যানিশ দেশের মত নির্মাতাও তার লেখা উপন্যাসকে নিজের ভাষায় ট্রান্সলেট করে চলচ্চিত্র বা এনিমেশনের তৈরি করেন।
১০/ কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা
বেগম রোকেয়া নারীদেরকে শিক্ষিত করে সমাজে গড়ে তোলার জন্য এবং সমাজ থেকে কুসংস্কারপূর্ণ মনোভাব দূর করার জন্য অনেক চেষ্টা প্রচেষ্টা করে গিয়েছেন। তার চেষ্টার ফলে সমাজ অনেকটা কুসংস্কার মুক্ত হয়েছে। যদিও সবাই কুসংস্কার মুক্ত হতে পারেনি তবে আগের থেকে অনেকটা কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গড়ে উঠেছে।
বেগম রোকেয়া শুধু নারী জাগরণের অগ্রদূতই নয় বরং তিনি সমাজের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তার কাজকর্ম আমাদের সমাজকে আগের তুলনায় এগিয়ে নিয়ে যেতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে।