- সুনাগরিকের ১০টি বৈশিষ্ট্য:
- ১/ বুদ্ধি
- ২/ বিবেক
- ৩/ আত্মসংযম
- ৪/ সুশিক্ষিত হওয়া
- ৫/ সমাজের ও রাষ্ট্রের নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা ও নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া
- ৬/ সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা
- ৭/রাষ্ট্রের প্রশাসনিক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা
- ৮/ স্বৈরাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা
- ৯/ সহনশীল ও ধৈর্যশীল হওয়া
- ১০/ দেশপ্রেম এবং দেশ- জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করা
- Rk Raihan

সুনাগরিকের ১০টি বৈশিষ্ট্য – সাধারণত রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নতি সাধনের জন্য একজন নাগরিকের মধ্যে যে ধরনের গুণগুলো থাকা আবশ্যক তাকেই সুনাগরিক বলে। একটি দেশকে সঠিকভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং দেশের উন্নয়নে সুনাগরিক ব্যক্তির অত্যন্ত প্রয়োজন। সুনাগরিক ব্যক্তি ছাড়া একটি দেশের উন্নতি আশা করা যায় না। একটি দেশের মান, সম্মান, মর্যাদা, খ্যাতি, ঐতিহ্য একজন সুনাগরিক ব্যক্তির কর্মের উপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত হয়। আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমি আপনাদের সঙ্গে সুনাগরিকের দশটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করব যে দশটি বৈশিষ্ট্য না থাকলে নিজেকে একজন সুনাগরিক হিসেবে বিবেচিত মনে হবে না।
সুনাগরিকের ১০টি বৈশিষ্ট্য:
১/ বুদ্ধি
সুনাগরিকের ১০টি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বুদ্ধি। বুদ্ধি একজন ব্যক্তির মূল্যবান জিনিস যা দিয়ে সে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
সুনাগরিকের এমন কিছু বুদ্ধি থাকা প্রয়োজন যার মাধ্যমে সে তার দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। আমরা জানি জাপান ও জার্মানির মত এমন আরো অনেক দেশ আছে যারা তাদের বুদ্ধি দিয়ে তাদের দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পৌছে নিতে সক্ষম হয়েছে।
সুতরাং আমাদেরও উচিত তাদের মত দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে বুদ্ধির গুণাবলী শেখা যেন আমরা আমাদের দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে নিতে পারি।
দেশের নাগরিক যদি বুদ্ধিমান হয় তাহলে সে অজানাকে জানতে পারবে, অচেনাকে চিনতে পারবে এবং অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারবে। এছাড়াও একজন বুদ্ধিমান সুনাগরিক ব্যক্তি সরকারি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেও দেশকে উন্নতির শীর্ষে নিয়ে যেতে পারবে।
২/ বিবেক
সুনাগরিকের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিবেকবান সুনাগরিক ব্যক্তি। তারা সকল প্রকার অন্যায় ও মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।
একজন বিবেকবান সুনাগরিক ব্যক্তি ভালো-মন্দ ন্যায়- অন্যায়, সত্য- মিথ্যা সম্পর্কে অবগত হতে পারে যার ফলে সে তার সমাজে, দেশে যদি কোন অন্যায় বা মিথ্যামূলক কিছু হতে দেখে তাহলে সে সেখানে প্রতিবাদ করতে পারে।বিবেকবান সুনাগরিক ব্যক্তি দেশের সকল জনগণকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে বাধ্য করে।
বিবেকবান ব্যক্তির মাধ্যমে অন্যান্য জনগণরাও সুপথের দিকে পরিচালিত হয়। বিবেকবান ব্যক্তি দেশের স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে সহায়তা করে। বিবেকবান সুনাগরিক ব্যক্তি হচ্ছেন আমাদের দেশের ও সমাজের শক্তি।
৩/ আত্মসংযম
সুনাগরিকের বৈশিষ্ট্যে গুলোর মধ্যে তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আত্মসংযমী হওয়া যা সুনাগরিকের অন্যতম মৌলিক ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আত্মসংযমী হওয়ার ফলে সুনাগরিক ব্যক্তি সকল প্রকার লোভ লালসা নিচ ও হীন চরিত্রের কাজকর্ম থেকে মুক্ত থাকে।
আত্মসংযমী হওয়ার ফলে একজন সুনাগরিক ব্যক্তি একে অন্যের মতামতের প্রাধান্য দেয় যার ফলে একে অপরের প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। আত্মসংযমী হওয়া সুনাগরিকের এমন একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য যার ফলে ব্যক্তি সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে একে অন্যের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে এমনকি দেশকে স্বাধীন করতে নিজেকে বিলিয়ে দেয়।
৪/ সুশিক্ষিত হওয়া
সুনাগরিকের ১০টি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সুশিক্ষিত নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠা। একজন সুশিক্ষিত নাগরিক দেশকে এবং দেশের প্রতিটি জনগণকে শিক্ষার আলোর দিকে আহবান করতে পারে।
সুশিক্ষিত হওয়ার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত শিক্ষা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। শিক্ষিত না হলে আমাদের দেশ ও জাতি অশিক্ষিত ও জ্ঞানহীন রয়ে যাবে। সুশিক্ষিত হওয়ার জন্য এবং দেশ ও জাতিকে সুশিক্ষার পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সুনাগরিকের উচিত প্রতিটি এলাকায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা করা।
এমনকি যারা গরীব দুঃখী লেখাপড়া করতে পারছে না অথবা সামর্থ্য নেই তাদের জন্য অল্প খরচের মধ্যে সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা যাতে ধনী, গরিব, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সকলেই শিক্ষা অর্জন করতে পারে এবং গরিবরাও শিক্ষা নামক আলো থেকে বঞ্চিত না হয়।
৫/ সমাজের ও রাষ্ট্রের নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা ও নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া
সুনাগরিকের দশটি বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে পঞ্চম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের নিয়ম মানা ও নাগরিকদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া। প্রতিটি দেশেই নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম কানুন বরাদ্দ থাকে যা একজন সুনাগরিকের মেনে চলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
রাষ্ট্রের নিয়ম কানুন মেনে না চলে আপনি একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারবেন না। সুনাগরিক হওয়ার জন্য রাষ্ট্রের প্রতিটি নিয়ম-শৃঙ্খলা ও সমাজের প্রত্যেকটি নিয়ম কানুন মেনে চলার পাশাপাশি অন্যদেরকেও সমাজ ও রাষ্ট্রের নিয়ম কানুন মেনে চলার জন্য উপদেশ দিতে হবে।
নাগরিকদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া একজন সুনাগরিকের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। সুনাগরিক হিসেবে নাগরিকদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
সকল নাগরিক যেন সমান অধিকার লাভ করতে পারে এবং তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব গুলো সঠিকভাবে পালন করতে পারে এজন্য তাদেরকে রাষ্ট্রীয় নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে।
৬/ সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা
সৎ কাজের উপদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়া সুনাগরিকের ১০ টি বৈশিষ্ট্যের অন্যতম গুণাবলী।আপনাকে দেশের জন্য ও নিজের জন্য প্রতিটি কাজ সৎ ভাবে করার অভ্যাস করতে হবে এবং যদি কাউকে অসৎ কাজ করতে দেখে থাকেন তাহলে তাকে অসৎ পথ থেকে দূরে আসার জন্য সঠিকভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে এবং নির্দেশ দিতে হবে যেনো সে এই ধরনের কাজ না করে।
৭/রাষ্ট্রের প্রশাসনিক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা
প্রতিটি দেশে রাষ্ট্রের বিশেষ কিছু প্রশাসনিক নিয়ম শৃঙ্খলা রয়েছে যা একজন সুনাগরিকের মেনে চলা প্রধান কর্তব্য। রাষ্ট্রের প্রশাসনিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ না করলে রাষ্ট্রীয় নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত হওয়া মুশকিল হয়ে যায়। সুতরাং একজন সুনাগরিকের উচিত রাষ্ট্রের প্রশাসনিক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা এবং অন্যদেরকেও এই বিষয় জ্ঞান লাভ করতে উৎসাহিত করা।
৮/ স্বৈরাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা
স্বৈরাচারী ও জুলুমের বিরুদ্ধে জনপপ্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তৈরি করা সুনাগরিকের ১০ টি বৈশিষ্ট্যের একটি। সুনাগরিক হিসেবে আমরা যদি জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করি তাহলে সাধারণ মানুষের উপর অসৎ ব্যক্তিরা জুলুম করতে থাকবে এবং সাধারণ জনগণ তাদের অধিকার ও দায়িত্ব-কর্তব্য থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়বে।
৯/ সহনশীল ও ধৈর্যশীল হওয়া
সুনাগরিক হিসেবে একজন নাগরিকের উচিত অন্যান্য নাগরিকদের প্রতি সহনশীল ব্যবহার করা তাহলে অন্যান্য নাগরিকরা আপনাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করবে। এছাড়া ধৈর্যের সাথে আপনাকে প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করতে হবে যা দেশ জাতি ও সমাজের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। সুনাগরিকের দশটি বৈশিষ্ট্যে সহনশীল ও ধৈর্যশীল হওয়া সুনাগরিকদের চরিত্রের বিশেষ গুণাবলীর মধ্যে পড়ে।
১০/ দেশপ্রেম এবং দেশ- জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করা
দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে আত্মনিয়োগ করা সুনাগরিকের ১০টি বৈশিষ্ট্যের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য।একজন সুনাগরিককে শুধুমাত্র নিজের ভালো-মন্দের কথা ভাবলেই হবে না, তার আশেপাশের সমাজ, জাতি ও অন্যান্য নাগরিকদের ভালো-মন্দের কথাও বিচার বিবেচনা করতে হবে।
দেশপ্রেমিক হওয়া সুনাগরিকের একটি মহৎ গুণ। দেশপ্রেমিক না হলে ব্যক্তি সুনাগরিক হিসেবে গণ্য হবে না।আপনার দেশ যতই উন্নয়নশীল হোক বা উন্নয়নশীল না হোক, অথবা আপনার দেশ অন্যান্য দেশের তুলনায় উন্নত না হলেও আপনাকে আপনার দেশের প্রতি মায়া-মমতা প্রেম ও ভালবাসা জাগ্রত করতে হবে।
একজন দেশ প্রেমিক সুনাগরিক ব্যক্তি তার নিজের দেশের উন্নতির চরম শীর্ষে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আত্মনিয়োগ করতে বাধ্য।
সুনাগরিকের যতগুলো বৈশিষ্ট্য আছে তার মধ্যে প্রধান দশটি বৈশিষ্ট্য আজকে আমাদের এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আমাদের এই পোস্টটি ভালোভাবে পড়ার মাধ্যমে আপনি সুনাগরিক হওয়ার ১০ টি প্রধান গুণাবলী আপনার নিজের ব্যক্তিদের মধ্যে অর্জন করতে পারবেন।