- আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য :
- ১/আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য এর মধ্যে প্রথম বাক্যটি হলো- তাওহিদের প্রতি বিশ্বাস
- ২/ ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস
- ৩/ নবী রাসুল এর প্রতি বিশ্বাস
- ৪/ আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য এর মধ্যে চতুর্থ বাক্যটি হলো- আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস
- ৫/ আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য এর মধ্যে পঞ্চম বাক্যটি হলো- কিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস
- ৬/ কবর প্রতি বিশ্বাস
- ৭/ আসমানি কিতাবের প্রতি বিশ্বাস
- ৮/ আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য এর মধ্যে অষ্টম বাক্যটি হলো- তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস
- ৯/ আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য এর মধ্যে নবম বাক্যটি হলো--জান্নাত- জাহান্নাম এর প্রতি বিশ্বাস
- ১০/হাশর-মিজান- পুলসিরাত এর প্রতি বিশ্বাস
- Rk Raihan

আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য – আকাইদ শব্দটি “আকিদাহ” শব্দ থেকে বর্ণিত হয়েছে। “আকিদাহ” শব্দের অর্থ বিশ্বাস। আকিদাহ হচ্ছে একবচন শব্দ এবং আকাইদ হচ্ছে বহুবচন শব্দ। ইসলামের সমস্ত মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি মনে প্রাণে দৃঢ় বিশ্বাস রাখাকে আকাইদ বলা হয়।
আকাইদ সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাক্য কোরআন হাদিসে বর্ণিত রয়েছে তার মধ্যে আকাইদ সম্পর্কে ১০ টি বাক্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা না জানা থাকলে আমরা প্রকৃত মুমিন হতে পারব না।
আপনি যদি আমাদের আজকের আর্টিকেল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকেন তাহলে আকাইদ এর ১০টি বাক্য ভালোভাবে জানতে পারবেন।
আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য :
- তাওহিদের প্রতি বিশ্বাস
- ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস
- নবী রাসুল এর প্রতি বিশ্বাস
- আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস
- কিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস
- কবর প্রতি বিশ্বাস
- আসমানি কিতাবের প্রতি বিশ্বাস
- তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস
- কবর-জান্নাত- জাহান্নাম এর প্রতি বিশ্বাস
- হাশর-মিজান- পুলসিরাত এর প্রতি বিশ্বাস
১/আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য এর মধ্যে প্রথম বাক্যটি হলো- তাওহিদের প্রতি বিশ্বাস
তাওহিদ শব্দটির অর্থ হচ্ছে একত্ববাদ। আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে বিশ্বাস স্থাপন করাকে তাওহিদ বলে। তাওহিদে বিশ্বাসের মাধ্যমে আল্লাহতালার মহান গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের একমাত্র মাবুদ।
তিনি আমাদের একমাত্র রক্ষাকারী, পালনকর্তা, সৃষ্টিকর্তা, রহমত দানকারী,ক্ষমাশীল, শাস্তিদাতা, পুরস্কার দানকারী। তিনি আমাদেরকে তার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন।
দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করার জন্য আমাদেরকে তাওহিদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে কারণ পরকালে আমাদের প্রত্যেকটি কাজকর্মের জন্য মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।এই শিক্ষাটি আমরা তাওহিদের মাধ্যমেই পেয়ে থাকি।
তাওহিদের প্রতি বিশ্বাস মানুষকে আত্মমর্যাদাবান ও আত্মসংযমি হয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। তাওহিদের প্রতি বিশ্বাসের মাধ্যমে মানুষ সকল প্রকার খারাপ কাজ ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। একজন মুসলিম যিনি তাওহিদের উপর বিশ্বাস করে সে আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করতে পারে না।
২/ ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস
ফেরেশতারা নূরের তৈরি। মহান আল্লাহতালা ফেরেশতাদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেক মুমিনের ওপর এটি ফরজ কাজ সে যেন আল্লাহর সৃষ্টি করা ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে।
ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস স্থাপনে আমাদের অনেক উপকার রয়েছে। যেমন- ফেরেশতারা মুমিনদের জন্য আল্লাহতালার নিকট দোয়া করে থাকে, ফেরেশতারা মুমিনদের গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করে থাকে।
হাদিসের মাধ্যমে আমরা ফেরেশতাদের সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারি কিন্তু আল্লাহ কতজন ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন এটি আল্লাহ ছাড়া কেউই বলতে পারেনা।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন-“যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চার পাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে- হে আমাদের পালনকর্তা! আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যপ্ত।
অতএব, যারা তাওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন।হে আমাদের পালনকর্তা!
আর তাদেরকে প্রবেশ করান চিরস্তায়ী বসবাসের স্থান জান্নাতে। যার ওয়াদা আপনি দিয়েছেন এবং তাদের বাপ-দাদা, পতি-পত্নী ও সন্তানদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা মুমিন : আয়াত ৭-৯)”
৩/ নবী রাসুল এর প্রতি বিশ্বাস
মহান আল্লাহতালা মানব জাতিকে খারাপ ও কুপথ থেকে ভালো পথে আনার জন্য যুগে যুগে বহু নবী রাসূলগণদের প্রেরণ করেছেন।
মহান আল্লাহতালা তার বাণী ফেরেশতাদের মাধ্যমে নবী-রাসূলের কাছে পাঠাতেন এবং নবী রাসূলগণ সেটি আমাদের মাঝে পৌঁছে দিতেন। নবী রসগোল্লার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা প্রত্যেক মুমিনের ওপর ফরজ। মহান আল্লাহ ও ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার পর নবী রাসূলগণের উপরও বিশ্বাস করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা পবিএ কুরআনে বলেন,
﴿كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللَّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ وَأَنْزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ﴾
‘‘প্রথমে সব মানুষ একই পথের অনুসারী ছিল। তাদের মধ্যে যখন মতভেদ শুরু হলো তখন আল্লাহ নবীদেরকে পাঠালেন। তারা ছিলেন সত্য সঠিক পথের অনুসারীদের জন্য সুসংবাদদাতা এবং অসত্য পথ অবলম্বনের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শনকারী। আর তাদের সাথে সত্য কিতাব পাঠান, যাতে সত্য সম্পর্কে তাদের মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল তার মীমাংসা করা যায়’’।
(সূরা আল বাকারা: ২১৩)
৪/ আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য এর মধ্যে চতুর্থ বাক্যটি হলো- আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস
আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন বলতে মৃত্যুর পরের জীবন পরকালকে বোঝানো হয়। মৃত্যুর পর আমাদের দেহ থেকে রুহ বের হয়ে যাওয়ার পর আখেরাতে জীবন শুরু হয়ে যায়।
যারা প্রকৃত মুমিন তাদের অন্যতম একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস। আখিরাতের প্রতি যারা বিশ্বাস স্থাপন করে সে সকল মুমিন ব্যক্তিরা তাদের দুনিয়ার কৃতকর্ম সম্পর্কে সচেতন হয়।কারণ দুনিয়ায় আমরা যে কাজ করব আখেরাতে প্রত্যেকটি কাজের হিসাব দিতে হবে।
মহান আল্লাহ বলেন:
مَنْ آَمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآَخِرِ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ
‘‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’’
৫/ আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য এর মধ্যে পঞ্চম বাক্যটি হলো- কিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস
কেয়ামত শব্দটি “কিয়ামাহ” শব্দ থেকে এসেছে।কেয়ামত শব্দের অর্থ হচ্ছে “উঠে দাড়ানো”। প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তিকে কেয়ামতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়।
কেয়ামতের দিন ঈসরাফিল (আ) শিংগায় ফু দিবেন তখন পৃথিবীর সকল জীবজন্তু, গাছপালা, পশু পাখি, মানুষ আরো যা কিছু আছে সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে।
চন্দ্র, তারা, পাহাড়, পর্বত সবকিছুই তুলার মত উড়তে থাকবে। এমন কি দ্বিতীয়বার ফু দেয়ার পর পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে সেদিন পর্যন্ত যাদের অস্তিত্ব ছিল তারা পুনরায় জীবিত হয়ে যাবে।
৬/ কবর প্রতি বিশ্বাস
মৃত আমাদের জীবনের সবচেয়ে চিরন্তন সত্য কথা। মৃত্যু থেকে বাঁচার ক্ষমতা এই পৃথিবীর কারো নেই। পৃথিবীতে যার জন্ম হয়েছে তাকে মৃত্যুবরণ করতেই হবে।
মৃত্যুর পর আমাদের সকলের জীবনের প্রথম ধাপ হচ্ছে কবর। ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তাকে দাফন ও কাফন সম্পন্ন করে ইসলামিক বিধি নিষেধ অনুযায়ী কবরের মাটির নিচে রেখে আসা হয়। তার কিছুক্ষণ পর মুনকার ও নাকির নামক ফেরেশতা মৃত ব্যক্তির নিকট গিয়ে সাওয়াল জওয়াব শুরু করেন।
৭/ আসমানি কিতাবের প্রতি বিশ্বাস
আসমানী কিতাব মহান আল্লাহতালার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য এবং খারাপ পথ থেকে ভালো পথে নিয়ে আসার জন্য, সঠিক নিয়মে আল্লাহর আদেশ মেনে জীবন যাপন করার জন্য আল্লাহতালা নবি রাসূলের নিকট আসমানী কিতাব নাযিল করেছিলেন।
পৃথিবী সৃষ্টির পর সর্বমোট ১০৪টি আসমানী কিতাব নাযিল করা হয়েছিল। তার মধ্যে চারটি আসমানী কিতাব ছিল প্রধান। সেগুলোর মধ্যে আছে- তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল, কুরআন।
এই চারটি আসমানী কিতাবের মধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব হচ্ছে কুরআন শরীফ যা আমাদের শেষ ও সর্বসেরা নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল হয়েছিল।
৮/ আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য এর মধ্যে অষ্টম বাক্যটি হলো- তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস
তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস বলতে ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা কে বুঝায়।পৃথিবীতে মানবজাতির জন্মের আগে মহান আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেকের ভাগ্য লিখে রেখেছেন।
মহান আল্লাহতালা বলেছেন দুয়া একমাত্র উপায় যা ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি তাকদীরের উপর বিশ্বাস না করে এবং কুসংস্কারী কোনো নিয়ম কানুনে বিশ্বাস করে তাহলে সে ব্যক্তি ঈমানহারা হয়ে যাবে।
৯/ আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য এর মধ্যে নবম বাক্যটি হলো–জান্নাত- জাহান্নাম এর প্রতি বিশ্বাস
জান্নাত ও জাহান্নামের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা আকাইদের মূল বিষয়গুলোর একটি। যারা দুনিয়াতে আল্লাহতালার ইবাদত সঠিকভাবে পালন করবে, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করবে, ভালো কাজ করবে তারা জান্নাতে যেতে পারবে।
যারা সব সময় মানুষকে কষ্ট দেয়, মহান আল্লাহ তায়ালার নিয়ম নির্দেশ পালন করে না তারা জাহান্নামে যাবে।
মহান আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বলেছেন- “কিয়ামতের দিন আল্লাহর রহমত ছাড়া কেউই জান্নাতে যেতে পারবে না”।
১০/হাশর-মিজান- পুলসিরাত এর প্রতি বিশ্বাস
হাশরের ময়দানে মহান আল্লাহতালা যখন আমাদের সকলের কৃতকর্মের হিসাব নিবেন তখন সেটি মিজানের পাল্লা দিয়ে মাপা হবে।
মিজানের পাল্লায় যাদের পাপের পরিমাণ বেশি হবে তারা পুলসিরাত পার হতে পারবে না। মিজানের পাল্লায় যাদের ভালো কাজের পরিমাণ বেশি হবে তারা দ্রুত পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে পৌঁছে যেতে পারবে।
সুতরাং বলা যায়, প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তির উপর আকাইদের এই দশটি বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করা ফরজ। আশা করি, আমাদের এই পোস্টটি পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে আপনারা সঠিকভাবে আকাইদের মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন।