ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব আলোচনা কর

13 Aug, 2023

ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে আগমন করলেও ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক স্বার্থ রাজনৈতিক কর্তৃত্বে রূপলাভ করেছিল। এদেশের ভাগ্য বিধাতা হিসেবে প্রায় দু’শত বছর এদেশ শাসন ও শোষণ করেছিল ।

→ ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের ইতিবাচক প্রভাব : নিম্নে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের ইতিবাচক প্রভাব আলোচনা করা হলো :

১. ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে ভারতের কৃষি শিল্প ধ্বংস হলেও এ সময় অর্থনীতিতে কিছু আধুনিকতার সূচনা হয় যা পরবর্তীকালের ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রভাবিত করে ভারতকে অর্থনৈতিকভাবে আধুনিক করে তোলে ।

২. খ্রিস্টান মিশনারি আর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের চাপে কোম্পানি সরকার সামাজিক ক্ষেত্রে কিছু সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক ভারতীয় সমাজের সংস্কার সাধন করে ভারতকে আধুনিক শিখায় শিক্ষিত করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। লর্ড ডালহৌসি ও ভারতীয় সমাজের সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

তাদের সময়েই সমাজের সতীদাহ প্রথা দূর হয়। কন্যা সন্তান হত্যা বন্ধ হয় বাল্যবিবাহ রোধ হয়। বিধবা বিবাহ প্রচলন হয় এবং ভারতে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুবাদে ভারতে আধুনিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটে।

৩. ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তনের ফলে জমিদার আর মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব হয়। উকিল, মোক্তার, ব্যাংকার, সাংবাদিক সবাই ছিলেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। আর মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকেই কালক্রমে সমাজ সংস্কার, রাজনীতিবিদের আবির্ভাব ঘটে।

এরা বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আর সংগঠনের মাধ্যমে ভারতীয় জনমতের প্রতিফলন ঘটান। পরিবর্তীকালে এসব সমিতিগুলোই মত আর আদর্শের ভিত্তিতে সর্বভারতীয় রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটনা যার ফলশ্রুতিতে ১৮৮৫ সালে গঠিত হয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস।

ভারতে মুসলমানদের মধ্যে ও জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি আর তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম লীগ। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ ভারতীয় রাজনৈতিক ঘটনারই বহিঃপ্রকাশ।

→ ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের নেতিবাচক প্রভাব : নিম্নে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের নেতিবাচক প্রভাব আলোচনা করা হলো :

See also  মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ | মুজিবনগর সরকার বলতে কি বুঝ

১. ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনামলে ভারতে চিরাচরিত অর্থনীতিকে ধ্বংস করে সেখানে ধনতন্ত্রের বিকাশ সাধনই ছিল ব্রিটিশ শাসনের অন্যতম অবদান। ব্রিটিশ পূর্ব যুগে ভারতে নানা ধরনের মুদ্রা প্রচলিত ছিল ।

কিন্তু ব্রিটিশ সরকার সব ধরনের টাকা বাতিল করে দেশের সর্বত্র একই প্রকার মুদ্রা চালু করেন। কর্মচারীদের বেতন জমির পরিবর্তে নগদ অর্থে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় । এভাবে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনামলে মধ্যযুগীয় সমস্ত অর্থনীতিকে আধুনিক টাকা অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করা হয়।

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রথম অর্ধশতক ছিল চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কাল। পলাশি যুদ্ধে জয়লাভের পর থেকে কোম্পানি ও তার কর্মচারীদের লাগামহীন শোষণের ফলে কোটি কোটি টাকা ভারত থেকে ইংল্যান্ডে পাচার হয়। ব্রিটিশ উপনিবেশিক স্বার্থ রক্ষার অজুহাতে ব্রিটিশ শাসনামলে ভূমিক রাজস্ব ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমির মালিক হয় জমিদার আর লাভবানও হয় জমিদার শ্রেণি । ব্রিটিশ উপনিবেশিক সরকারের ভূমি রাজস্ব নীতির ফলে কৃষকের সর্বনাশের পাশাপাশি বাংলার ব্যবসায়ী কারিগর ও শিল্পীদের ভবিষ্যৎও অন্ধকার হয়ে যায় ।

২. ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল সামাজিক ক্ষেত্রে। অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকের ভারতের হিন্দু সমাজ ছিল একাধিক অমানবিক কুসংস্কারের শিকার। যেমন- সতীদাহ প্রথা, কন্যা, সন্তান হত্যা, গঙ্গা দেবীকে সন্তান দান, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কৌলিন্যপ্রথা, দাসপ্রথা ইত্যাদি।

সমাজের নৈতিক চরিত্র একেবারে নিচে নেমে গিয়েছিল। কোম্পানি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠার পর ভারতে ধর্মীয় ক্ষেত্রে তারা কোনো পরিবর্তন করতে চাননি ।

৩. ভারতে ইংরেজ শাসনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভাব লক্ষ করা যায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। বর্তমান কালের ন্যায় মুঘল যুগে বাংলায় কোনো রাজনীতি বা রাজনৈতিক দল ছিল না। সাধারণত চক্রান্ত, গৃহযুদ্ধ আর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হতো।

সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা জনমতের কোনো গুরুত্ব ছিল না। সে সময় জীবনের গতিধারা নিয়ন্ত্রিত হতো জয়ের দ্বারা, কর্মের দ্বারা নয়। কিন্তু ভারতের উপনিবেশিক শাসনের ফলে জন্ম শক্তির স্থলে কর্মশক্তি সবল হয়ে উঠে।

See also  সমাজ কি | সমাজ কাকে বলে | সমাজ বলতে কি বুঝায়

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতে উপনিবেশিক শাসনের নেতিবাচক প্রভাব শুধু ভারতীয়দের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করেনি। এসব প্রভাব ভারতীয়দের আধুনিকতার দিকে এগিয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলেছিল।

Rk Raihan

আমি আরকে রায়হান। আমাদের টার্গেট হল ইন্টারনেটকে শেখার জায়গা বানানো। আরকে রায়হান বিশ্বাস করেন যে জ্ঞান শুধুমাত্র শেয়ার করার জন্য তাই কেউ যদি প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছু জানে এবং শেয়ার করতে চায় তাহলে আরকে রায়হান পরিবার তাকে সর্বদা স্বাগত জানানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Category