১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ব্যাখ্যা কর

12 Aug, 2023

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ব্যাখ্যা কর

উত্তর : ভূমিকা : বাঙালিরা বীরের জাতি। অন্যায়, অত্যাচার ও শোষণের নিকট কখনো মাথানত করেনি। বীরের মতো সংগ্রাম করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন।

১৯৬৯ সালের কঠোর আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানি সরকার আগরতলা মামলার আসামিদের মুক্তি দেয়। বঙ্গবন্ধু জনপ্রিয়তা বাংলাদেশের সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের ফলে আইয়ুব সরকারের পতন হয় ।

→ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ জাগ্রত হয়। নিম্নে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল উল্লেখ করা হয় :

১. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অবসান : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অবসান ঘটে। গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানি সরকার ভীত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের সর্বস্তরের জনগণ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের উপর সমর্থন জানায়। অবশেষে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সব আসামিদের বিনাশর্তে মুক্তি দেওয়া হয় ।

২. শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ মুজিবুরের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। শেখ মুজিব সর্বস্তরের জনগণের নেতা হিসেবে পরিচিত লাভ করে। শেখ মুজিবুরের মুক্তির পর ১৯৬৯ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুরকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেন তোফায়েল আহমেদ রেসকোর্স ময়দানের এক গণসংবর্ধনায় ।

৩. গোল টেবিল বৈঠকের আহ্বান : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার জন্য গোল টেবিল বৈঠকের আহ্বান করেন। এই বৈঠকে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি উত্থাপন করা হলে তা বাতিল হয় । আওয়ামী লীগ বৈঠক ত্যাগ করে ।

৪. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। সারাদেশে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আইন লঙ্ঘন করে মিছিল ও আন্দোলন করে। পুলিশ মিছিলে গুলিবর্ষণ করে ।

See also  সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি | সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য সমূহ উল্লেখ করো

৫. আইয়ুব সরকারের অবসান : কঠোর আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য গভর্নর মোনায়েম খানকে সরিয়ে ড. এস. এন হুদাকে গভর্নর নিযুক্ত করেন। আইয়ুব খানের পতনের পর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করেন ।

৬. ১৯৭০ সালের নির্বাচন : প্রচণ্ড চাপে পাকিস্তান সরকার সাধারণ নির্বাচন দেয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পায় । প্রাদেশিক পরিষদে ৩১০টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসন পায় । এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ।

৭. জাতীয়তাবোধের পুনর্জাগরণ : গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবোধের পুনর্জাগরণ ঘটে। বাঙালি তাদের অধিকার আদায়ে সচেতন হয়ে ওঠে। অন্যায়, অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালি ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করার সাহস পায় ।

৮. স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি : গণঅভ্যুত্থানের ফলে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেন। যার ফলে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিশ লাখ তাজা প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বাঙালি তাদের ঐতিহ্য ফিরে পায়। বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালের তাৎপর্য অপরিসীম। এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন।

ছাত্র, জনতা, শ্রমিকসহ সব স্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুসহ সব বন্দি নেতাদের মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হন। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাঙালি স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনেন। বিশ্ব দরবারে বাঙালি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ।

Rk Raihan

আমি আরকে রায়হান। আমাদের টার্গেট হল ইন্টারনেটকে শেখার জায়গা বানানো। আরকে রায়হান বিশ্বাস করেন যে জ্ঞান শুধুমাত্র শেয়ার করার জন্য তাই কেউ যদি প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছু জানে এবং শেয়ার করতে চায় তাহলে আরকে রায়হান পরিবার তাকে সর্বদা স্বাগত জানানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Category