সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে

2 Apr, 2023

প্রতিটি মানুষের স্বপ্নদোষ একটি প্রাকৃতিক বিষয়। একজন বালক যখন বয়ঃসন্ধিতে পড়ে তখন থেকেই তাঁর স্বপ্নদোষ সৃষ্টি হয়।

এটি একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা অনুসারে প্রায় প্রতিটি পুরুষের হয়ে থাকে। এই স্বপ্নদোষ বিষয়টি কখনোই খারাপ কিছু নয়। তবে আমরা এই সম্পর্কে তেমন জানি না বলে এটাকে গোপনে রাখতেই পছন্দ করি।

কিন্তু কিছু বিষয় যখন ইবাদতের জন্য জানা জরুরী হয়ে যায়। তখন আমরা চাইলেও তা আর গোপন রাখতে পারি না। তেমনই একটি বিষয় হচ্ছে স্বপ্নদোষ। যা অবশ্যই যেকোনো ইবাদতের পথে অন্তরায়। কেননা স্বপ্নদোষ হওয়া মানেই অপবিত্র হওয়া।

আর অপবিত্র হলে কখনোই কোনো ইবাদত পরিপূর্ণ হতে পারে না। যেকারণে সিয়াম তথা রোজার সময় যদি কারো স্বপ্নদোষ হয় তাহলে বিষয়টি একেবারে লজ্জ্বায় পড়ে যাওয়ার অবস্থা।

কারন রোজা হচ্ছে মহান আল্লাহতালার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতের মধ্যে একটি  গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত।

এই পৃথিবীতে  মহান আল্লাহতালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার ইবাদতের জন্য। আর সেই অনুযায়ী মহান আল্লাহ তালার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফরজ কাজের একটি হলো সিয়াম তথা রোজা।

আমরা জানি ইসলাম ধর্মের প্রতিটি ইবাদতের মধ্যে বিশেষ কিছু বিধি নিষেধ রয়েছে। আর সেই বিধি নিষেধ গুলো মেনে নিয়েই প্রতিটি মুসলমানকে তাদের ইবাদত পালন করতে হয়।

তাই আমরা যখন যেই ইবাদতই পালন করি না কেন,  ইসলাম ধর্মের বিধি নিষেধ গুলো মেনে নিয়েই তা  পালন করতে হবে।

ঠিক তদ্রুপ আমরা যখন রোজা পালন করব তখন রোজা ক্ষেত্রেও বিশেষ কিছু বিধি নিষেধ আমাদের মেনে চলতে হবে।

আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যাদের অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে রোজা থাকা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হয়ে যায়। আর তখনই অনেকেরই মাথায় একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, আর তা হল সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে?

তাই আজ আমরা সিয়াম বা রোজার সাথে স্বপ্নদোষের সম্পর্ক জানার চেষ্টা করব। অর্থাৎ সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে কিনা? কিংবা স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কি না ইত্যাদি।

সেহরি কী

সেহরি মানে হলো ভোর রাত্রির খাবার। সেহরি শব্দের অর্থ হলো ভোরের খাবার। আমরা রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময়ে যে খাবার গ্রহণ করি, সেটাকে ইসলামের পরিভাষায় বলা হয় সাহরি।

See also  ইহকালের জন্য আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য বিস্তারিত হাদিস এর ধারণা

রোজা রাখার নিয়তে সাহরি খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। সাহরি খাওয়ার অনেক ফজিলত পবিত্র হাদিসে এসেছে। আনাস ইবনু মালিক রাদিআল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সাহরী খাও। কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯২৩)

আমরা সাধারণত শেষ রাতে সুবহে সাদিকের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত সেহরি খেয়ে থাকি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও সবসময় শেষ রাত্রিতে সেহরি খেতেন। গভীর ঘুম থেকে উঠে সেহরি খেতে হয় বলে, অনেক সময়  সেহরি খাওয়ার আগ মুহুর্তে ঘুম থেকে উঠার পূর্বে স্বপ্নদোষ হয়ে যায়। তাই অনেকেই জানতে চান, সেহরি খাওয়ার আগ মুহুর্তে ঘুম থেকে উঠার পূর্বে স্বপ্নদোষ হয়ে গেলে রোজা ভঙ্গ হবে কিনা?

আবার আমাদের অধিকাংশ মানুষই রয়েছেন সেহরি খাওয়ার পর একটু ঘুমান। কিংবা যারা ইয়াং জেনারেশন তারা সেহরির পর বেশ কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়ে নেয়। এই ইয়ং জেনারেশনই বেশীর ভাগ তখন অনিচ্ছাকৃত স্বপ্নদোষে পড়ে যান।

আর তখন তাদের মনে প্রশ্ন জাগে সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে? আমাদের কাছে অনেকেই জানতে চান, “রাতে স্বপ্নদোষ হলে গোসল না করেই কি সাহরি খাওয়া যাবে? বিঃদ্রঃ- আমরা গ্রামে থাকি তাই গোসল করতে নদীতে যেতে হয়। যা একটু কষ্টটকর এবং একইসাথে  লজ্জারও বটে”

সুতরাং সেহরি খাওয়ার আগে এবং সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে আসলেই কি রোজা ভঙ্গ হবে? আসুন আমরা পবিত্র হাদিস থেকে এর উত্তর জেনে নিই।

সেহরির আগে স্বপ্নদোষ হলে

যদি কারো এমন পরিস্থিতি হয় যে, সেহরি খাওয়ার আগে কিংবা পরে স্বপ্নদোষ হয়েছে। তাহলে সে অবশ্যই রোজা রাখবে। কারণ পবিত্র হাদিসে এসেছে, স্বপ্নদোষ হলে গোসল ফরজ হয়। আর গোসল ফরজ হলে, ঐ  অবস্থায় নামাজ, তাওয়াফ, কোরআন তেলাওয়াত কিংবা স্পর্শ করা এবং মসজিদে প্রবেশ করা ছাড়া অন্যান্য যেকোনো ধরনের সাধারণ কাজ করা যায়। -(বুখারী ২৭৯) সুতরাং এই হাদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে, কারো গোসল ফরজ হলেও সে সেহরি খেতে পারবে, এতে তার কোনো বাঁধা নেই।

See also  ইহকালের জন্য আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য বিস্তারিত হাদিস এর ধারণা

তবে এটা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, গোসল ফরজ হওয়া অবস্থায় যেন, আমাদের সালাত বাদ না যায়। অর্থাৎ কারো সেহরির আগে গোসল ফরজ হয়েছে, যে ঐ অবস্থায় রোজা রাখবে ঠিকই। তবে সালাত বা নামাজ আদায়ের জন্য তাকে অবশ্যই গোসল করতে হবে। কেননা অপবিত্র অবস্থায় নামাজ ফৌত হওয়া খুবই মারাত্মক গোনাহ।

কেননা রাসুল সা. বলেছেন, যার নামাজ ফৌত হয়ে গেল, তার যেন পরিবার ও সম্পদ সবই ধ্বংস হয়ে গেল। (মুসনাদে আহমাদ হাদিস ২৩৬৪২) অতএব অবশ্যই আমাদের  ফজর নামাজের ওয়াক্তের আগেই গোসল করে নামাজ আদায় করে নিতে হবে।

সেহরি পরে স্বপ্নদোষ হলে

একইভাবে যারা রোজা রাখার পর তাদের ঘুমের মধ্যে অনিচ্ছাকৃতভাবে স্বপ্নদোষ হয়ে যায়। তাদের রোজা ভঙ্গ হবে না। এই বিষয়ে বিখ্যাত শাইখ বিন বায (রহ.) কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি এর উত্তরে বলেন, তার উপর রোজা কাযা আদায় করা আবশ্যক নয়। কেননা স্বপ্নদোষ তার ইচ্ছাধীন কিছু নয়। তবে, তার উপর অবশ্যই গোসল ফরয,  যদি সে বীর্যের আলামত দেখে। [মাজমুউল ফাতাওয়া (১৫/২৭৬)]

ঠিক একই প্রশ্ন শাইখ উছাইমীন (রহ.) কে করা হলে তিনি জবাব দিয়েছেন, তার রোযা সহিহ হবে। স্বপ্নদোষের কারণে তার রোযা ভাঙ্গবে না। কেননা স্বপ্নদোষ তার এখতিয়ারের (ইচ্ছার) মধ্যে নেই। যেকারণে ঘুমন্ত অবস্থায় কলম তুলে রাখা হয়।

স্বপ্নদোষ তবে বীর্যের আলামত নেই

অনেকেই জানতে চান, রোযা অবস্থায় কারো স্বপ্নদোষ হল। কিন্তু, সে ঘুম থেকে জেগে উঠে বীর্যপাতের কোন আলামত দেখতে পাইনি। তার মানে সে বীর্যপাত হওয়া ছাড়াই স্বপ্ন দেখেছে। এমতাবস্থায় সে কি গোসল করে  রোযা পূর্ণ করবে? নাকি গোসল না করেই রোজা শেষ  করবে, নাকি রোযা ভঙ্গ হয়েছে বলে রোজা ভেঙ্গে ফেলব?

এর উত্তর হবে, কেউ যদি মনে করে তার স্বপ্নদোষ হয়েছে, কিন্তু ঘুম থেকে জাগে উঠার পর সে বীর্যের আলামতের কোনো কিছু তার কাপড়ে দেখতে পায়নি, তাহলে  তার উপর গোসল করা আবশ্যক হবে না।

See also  ইহকালের জন্য আকাইদ সম্পর্কে ১০টি বাক্য বিস্তারিত হাদিস এর ধারণা

এব্যাপারে ইবনে কুদামার ‘আল-মুগনি’ গ্রন্থে এসেছে, কোনো ব্যক্তির স্বপ্নদোষ হওয়াটা সে জেনেছে, কিন্তু তার (পোশাকে) বীর্যের আলামত পায়নি, তাহলে তার উপরে গোসল ফরয নয়। একইভাবে এই বিষয়ে ইবনুল মুনযির বলেছেন, যত জন বিখ্যাত আলেমের মতামত আমার মুখস্ত আছে, তারা সকলেই এই মতের উপর ইজমা করেছেন।

এই বিষয়ে সহিহ বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে, যা উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা বর্ণনা করেছেন, যেখানে উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা রাসুলুল্লাহ সা. থেকে জানতে চেয়েছিলেন যে, কোন মহিলার যদি স্বপ্নদোষের মতো কিছু হয় তাহলে কি তার উপর গোসল ফরয হবে? তখন রাসুলুল্লাহ সা. উত্তর দিয়েছিলেন হ্যাঁ তবে সে যদি পানি (বীর্য) দেখে। সুতরাং এই হাদিস থেকে নির্দেশ হয়েছে যে, কারো স্বপ্নদোষ হলে এবং সে পানি দেখলে অবশ্যই গোসল ফরজ। যদি না দেখে তবে গোসল ফরজ নয়।

উপরোক্ত আর্টিকেল থেকে আমরা জানতে পারলাম, সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে? এর উত্তর। একইভাবে জানতে পারলাম রোজা রেখে স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে না। একইসাথে কারো যদি মনে হয় স্বপ্নদোষ হয়েছে, কিন্তু বীর্য দেখা যায়নি তাহলে তার রোজা হবে এবং পবিত্র থাকবে।

শেষ কথা : সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে

পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। আর এই রোজা অবশ্যই পবিত্র অবস্থায় পালন করতে হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা অপবিত্র অবস্থায় কোন মুসলমানের রোজা কবুল করেন না।

স্বপ্নদোষ হওয়া মানেই অপবিত্র হওয়া। মানুষের স্বপ্নদোষ মূলত খারাপ চিন্তা ও খারাপ মনোভাব থেকে হয়ে থাকে।

তাই আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে সকল প্রকার অশ্লীল ও বাজে চিন্তা থেকে দূরে থাকা। যদি আমরা সকল আজেবাজে চিন্তা থেকে দূরে থাকতে পারি তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা স্বপ্নদোষ থেকে দূরে থাকতে পারবো।

Rk Raihan

আমি আরকে রায়হান। আমাদের টার্গেট হল ইন্টারনেটকে শেখার জায়গা বানানো। আরকে রায়হান বিশ্বাস করেন যে জ্ঞান শুধুমাত্র শেয়ার করার জন্য তাই কেউ যদি প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছু জানে এবং শেয়ার করতে চায় তাহলে আরকে রায়হান পরিবার তাকে সর্বদা স্বাগত জানানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Category